বরিশাল বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট: সকলে নেতা, নেই অনুসরণকারী!

বরিশাল বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট: সকলে নেতা, নেই অনুসরণকারী!

বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি যেন বর্তমানে "সবাই রাজা, কেউ রাজত্ব মানে না"—এমনই এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতারা এখন বিভক্ত একাধিক বলয়ে। কেউ কাউকে মানছেন না, যার যার মতো করে তৈরি করছেন নিজস্ব প্রভাববলয়। এতে সংগঠনের ভেতরে জন্ম নিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্ষোভ ও বিভাজন।

দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলছেন, গত তিন দশকে বরিশালে বিএনপির এমন করুণ দশা কখনও দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতি নিরসনে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ, বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সক্রিয় ভূমিকা চেয়েছেন তাঁরা।

কমিটি নেই, বিভক্তির রাজনীতি চলছে

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মামলা ও হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ফলে জেলা-মহানগর পর্যায়ে আহ্বায়ক বা ভারপ্রাপ্ত কমিটির মাধ্যমেই চলছিল দলীয় কর্মকাণ্ড।

তবে ৫ আগস্টের পর নতুন করে সক্রিয় হন অনেক নেতা-কর্মী। যাঁরা এতদিন মাঠে ছিলেন না, তাঁরাই এখন পদ-পদবি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন, ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ত্যাগী নেতারা।

ত্রিমুখী নেতৃত্ব, বহুমুখী বিভেদ

বর্তমানে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে আছেন মনিরুজ্জামান খান ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এবং সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার। এই তিনজনের মাঝে নেতৃত্বের দৌরাত্ম্য স্পষ্ট।

  • ফারুক ও জিয়াউদ্দিন একটি বলয় তৈরি করেছেন

  • আফরোজা নাসরিন হক মাস্টার ও ছাত্রদল-যুবদলের কিছু অংশ নিয়ে আলাদা বলয়ে

  • মীর জাহিদুল কবির জাহিদ তাঁর অনুসারীদের নিয়ে তৃতীয় বলয়ের নেতৃত্বে

  • পদবঞ্চিত নেতাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মজিবর রহমান সরোয়ার, যিনি দলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য

এই গ্রুপিংয়ের কারণে কার্যত মহানগর বিএনপিতে চলছে নেতৃত্বের নৈরাজ্য।

জেলা দক্ষিণেও একই চিত্র

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আবুল হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন। তবে কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান রাজন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় আদর্শচ্যুতি ও আওয়ামী লীগঘেঁষা অবস্থানের অভিযোগ এনে পাল্টা বলয় গড়ে তুলেছেন। ফলে এখানেও চলছে তীব্র মতবিরোধ ও অস্থিরতা।

চেষ্টার পরও ব্যর্থ সমাধান প্রক্রিয়া

দলীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনতে বরিশাল ও ঢাকায় একাধিক বৈঠক হলেও কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে রাজি নয়। ফলে সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে।

নেতাদের প্রতিক্রিয়া

  • আবু নাছের মো. রহমতুল্লাহ (সদস্য, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি):
    "নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা ভালো, কিন্তু কাদা ছোড়াছুড়ি দলকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।"

  • আকন কুদ্দুসুর রহমান (সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বরিশাল বিভাগ):
    "বিভিন্ন মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু যা বরিশালে চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নজরে রেখেছে।"

  • নজরুল ইসলাম খান রাজন:
    "আওয়ামী লীগ ঘেঁষা নেতারা অর্থের বিনিময়ে দলকে ব্যবহার করছে।"

  • মীর জাহিদুল কবির জাহিদ:
    "ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে অনুপ্রবেশকারীদের পদায়ন করা হচ্ছে।"

  • মজিবর রহমান সরোয়ার:
    "বরিশালের বিএনপিতে বিভাজন এখন প্রকট। কিন্তু দল বাঁচাতে হলে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।"