পলিথিনে ঢাকা জীবনের গল্প: ঘরহীন ওমর আলীর চোখে শুধু একটাই স্বপ্ন

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বাসুরী গ্রামের দিনমজুর ওমর আলী একটি পলিথিনের ছাপড়া ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাবার রেখে যাওয়া সামান্য জমিতে তিন বছর আগে পলিথিন ও পুরোনো বস্তা দিয়ে একটি ঘর বানান তিনি। সেই থেকেই ঝড়–বৃষ্টি আর কষ্টকে সঙ্গী করে চলে তাঁর জীবনসংগ্রাম।
৪৮ বছর বয়সী ওমর আলীর একমাত্র সম্বল ছিল একটি ভ্যান। তবে ভাইয়ের অসুস্থতায় সেই ভ্যান বিক্রি করে দিতে হয়। এখন আর তাঁর পক্ষে নতুন ভ্যান কেনার মতো সামর্থ্য নেই। ভ্যানচালক থেকে এখন শুধুই একজন অনিয়মিত দিনমজুর। দিনে কাজ পেলে আহার জোটে, না পেলে না খেয়েই কাটে।
তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে এক ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে অভাবের কারণে। অন্য ছেলে ও মেয়ে স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলে এখনো পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে অশেষ কষ্টে।
ঘরের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। একটু বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ঘর, প্রবেশ করে পানি ও কাদা। ওমর আলীর স্ত্রী বলেন, "ঘরটা এতটাই খারাপ যে মানুষ না, পশুও ভালোভাবে থাকতে পারবে না। কেউ যদি সাহায্যে এগিয়ে আসতেন, অন্তত মাথা গোঁজার একটা জায়গা পেতাম।"
এই অসহায় অবস্থার খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পর বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের। খবর পেয়ে ওমর আলীর বাড়িতে যান কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল মোল্লা। তিনি বলেন, "বাড়িতে গিয়ে তার অবস্থা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে টিন দিয়ে ঘরের প্রাথমিক ব্যবস্থা করেছি। আরও সহায়তা করার উদ্যোগ নিচ্ছি।"
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, "আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি যাতে সরকারিভাবে ওমর আলীর জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়।"
ওমর আলীর স্বপ্ন একটাই—নিজের সামান্য জমিতে একখানা নিরাপদ ঘর, যেখানে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।