নওয়াজ শরিফ কি এখন পাকিস্তানের ‘ছায়া রাজনীতির’ মূল কারিগর?

দৈনিকচারঘাট ডেস্ক: পাকিস্তানের তথাকথিত ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’—যেখানে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সম্মিলিত প্রভাবেই রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে—তা সম্পূর্ণরূপে মেনে নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফ। তিনি তার ভাই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং মেয়ে ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমর্থন জানিয়ে চলেছেন।
বলা যায়, সামরিক বাহিনীর ছায়া ও বেসামরিক মুখপাত্রের মধ্যে এক অদৃশ্য বোঝাপড়া কাজ করে—সেই কাঠামোর মধ্যেই নীরব থেকে দৃশ্যপট নিয়ন্ত্রণ করছেন নওয়াজ ।
একইসঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সামরিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
পিএমএল-এন সূত্র জানিয়েছে, নওয়াজ শরিফ মিডিয়া ও সরাসরি রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বেশ কিছু সময় দূরে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার কন্যা মরিয়ম নওয়াজের নেতৃত্বাধীন পাঞ্জাব সরকারকে তিনি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আসছেন।
এক সিনিয়র দলের সূত্র জানিয়েছে, ‘নওয়াজ শরিফ বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি এর সীমাবদ্ধতাগুলো বোঝেন এবং কোনো অভিযোগ ছাড়াই তার কার্যকারিতা মেনে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে যে অপপ্রচারণা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ব্যক্তিগত কারণে রাজনীতিতে কম সক্রিয় থাকার পরও নওয়াজ মাঝে মাঝে পাঞ্জাব সরকারের অফিসিয়াল সভায় উপস্থিত হন এবং বিদেশি কূটনীতিক ও অতিথিদের সঙ্গে বাড়িতেই বৈঠক করেন। এই সময়ে প্রায়ই তার কন্যা মেয়রাম নওয়াজও তার সঙ্গে থাকেন। দলীয় সূত্র জানায়, নওয়াজ মরিয়মকে রাজনৈতিক পরামর্শ দিয়ে তার নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সহায়তা করছেন।
সূত্র আরও জানিয়েছে, শাহবাজ ও মরিয়মের কর্মদক্ষতায় নওয়াজ সন্তুষ্ট এবং তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করেন না। ‘তিনি শাহবাজকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তার শাসনকালে সন্তুষ্ট,’ দলীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিএমএল-এনের প্রচারণার মূল স্লোগান ছিল নওয়াজকে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী করার দাবি, তবে সূত্রের বরাতে জানা গেছে, নওয়াজ ইতিমধ্যেই তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন যে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে চান না এবং পরিবর্তে শেহবাজকে সরকার গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন।
যদিও নওয়াজ কখনো শাহবাজের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সরকারি সভায় উপস্থিত হননি, তবে বোঝা যায় যে শাহবাজ সময়-সময়ে গুরুতর জাতীয় ইস্যু নিয়ে তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
নওয়াজ জেনারেল আসিম মুনিরকে সেনাপ্রধান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করা হয়। ভারতবিরোধী একটি বড় সামরিক সফলতার পর মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়, যা নওয়াজ স্বাগত জানিয়েছেন।
যদিও নওয়াজের অসন্তোষের গুঞ্জন রয়েছে, দলীয় সূত্র জানিয়েছে যে তিনি এখনো দলের নেতৃত্ব ও বর্তমান রাজনৈতিক পথের সঙ্গে একমত এবং ‘হাইব্রিড সিস্টেম’ হিসেবে পরিচিত এই শাসনব্যবস্থার সামরিক ও নাগরিক শাখা দুইটির ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।