আমে ঢলনের বদলে এবার কেজিপ্রতি দেড় টাকা কমিশন

দৈনিকচারঘাট ডেস্ক: রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আম কেনাবেচায় ‘ঢলন’ প্রথা বন্ধ করা হয়েছে। তবে এর বদলে চালু হয়েছে ‘কমিশন’ প্রথা। এখন থেকে আড়তদাররা চাষিদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি দেড় টাকা করে, অর্থাৎ প্রতি মণে ৬০ টাকা পর্যন্ত কমিশন নিতে পারবেন।
বুধবার (১১ জুন) রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক দীর্ঘ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ।
চলতি মৌসুমে ঢলন বন্ধের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই কৃষক, আড়তদার ও প্রশাসনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। যুগ যুগ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে এক মণ আমের ওজন ধরা
হতো ৪২ থেকে ৫৫ কেজি পর্যন্ত। অথচ চাষিদের দাম দেওয়া হতো ৪০ কেজি ধরেই। এই অতিরিক্ত ওজনই ছিল ‘ঢলন’। প্রশাসনের নানা উদ্যোগেও এ প্রথা বন্ধ হয়নি।
এ সমস্যা নিরসনে গত ২৮ এপ্রিল বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনার পর কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। তবে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় গত ৪ জুন চাষি ও আড়তদাররা কমিশনার কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেন। পরদিন ৫ জুন বিভাগের চার জেলার আম সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা বসে।
প্রথম সভার সিদ্ধান্ত ছিল, জাত, গ্রেড ও গুণগত মান বিবেচনায় কেজি দরে আম বিক্রি হবে এবং কোনো কমিশন গ্রহণযোগ্য হবে না; কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় আড়তদারেরা ৪০ কেজিতে মণ হিসেবে আম কেনা বন্ধ করে দেন। বাধ্য হয়ে চাষিরা ফের ঢলন দিতেই থাকেন।
এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে রাজশাহী বিভাগীয় আম আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতি একটি সভা করে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ৪০ কেজিতেই মণ ধরা হবে, তবে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা করে কমিশন নেওয়া হবে। এতে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং বাজারে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি ইসমাইল খান বলেন, ঢলন বা কমিশন না দিতে চাইলে আড়তদারেরা আম কেনেন না। অনেকেই বাধ্য হয়ে আবার ঢলন মেনে নিচ্ছেন। কেউ আবার গোপনে ৫৪ কেজিকেই মণ ধরে আম বিক্রি করছেন। এতে আমের দাম পড়ে গেছে। সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণের হিমসাগর এখন ২ হাজার থেকে আড়াই হাজারে নেমে এসেছে।
এ অবস্থায় আবারও বসে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে বুধবারের সভা। বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে এই বৈঠক। সেখানে অংশ নেন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আমচাষি, হাট ইজারাদার, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
কানসাট হাট ইজারাদার শাহীন মিয়া জানান, সভায় আড়তদারেরা কেজিপ্রতি ৩ টাকা কমিশন দাবি করেন, আর চাষিরা রাজি ছিলেন ১ টাকায়। আলোচনা শেষে দুইপক্ষ সম্মত হন দেড় টাকা কমিশনে।
আড়তদার আলতাফ হোসেন বলেন, আম পচনশীল পণ্য। কেনার পর অনেক আম নষ্ট হয়। ঢলন না থাকলে ক্ষতি হয়। তাই কমিশন দিতেই হবে।
অন্যদিকে শিবপুর গ্রামের চাষি ফারুক হোসেন বলেন, আড়তদাররা এতদিন ঢলন নিয়েছে, এবার নিচ্ছে নগদ কমিশন। লাভের সময় তারা কিছু দেয় না, ক্ষতির দায় আমাদেরই নিতে হয়। সব জায়গায় আমরা জিম্মি।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে তার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পূর্বের সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন রাজস্ব শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুবায়ের হোসেন। এবারের বৈঠক ছিল অনির্ধারিত, তাই কোনো লিখিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।