রাজশাহীর চারঘাটে সংস্কারের অভাবে চারঘাট উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেহাল ও জরাজীর্ণ এসব ঘরে বসবাস করতে গিয়ে দরিদ্র শ্রেণির বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের পর থেকে আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে টিনশেড ঘরগুলোর দেয়াল ও ছাদের টিন, দরজা-জানালা ভেঙে গেছে বা ক্ষয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ফুটো চাল দিয়ে পানি পড়ায় প্রায় দেড় শতাধিক ভূমিহীন পরিবার চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ লতিফ জানান, চারঘাট উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাঁচা ও পাকা মিলে প্রায় ৮৫০টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঘরের বয়স ২৫-৩০ বছরের পুরনো। পুরাতন টিনশেড ঘরগুলো বেড়া ও ছাউনি টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কিছু টিন নষ্ট হতে পারে, যা নিজ দায়িত্বে ঘরমালিকদের সংস্কার করতে হবে।
সরেজমিনে শলুয়া ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবাসন-১, আবাসন-২ ও হলিদাগাছি প্রকল্পে প্রায় ৫০৪টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে আবাসন-১ ও ২-এর প্রায় ১৪০টি ঘর বসবাসের অনুপযোগী। বিভিন্ন সময়ে আগুনে পুড়ে প্রায় ৪৫টি ঘর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরে বৃষ্টির সময় আসবাবপত্র ভিজে যায়। কেউ কেউ ইট ও কাগজ দিয়ে বৃষ্টির পানি আটকানোর চেষ্টা করেন, আবার কেউ বর্ষায় প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
আবাসন-১-এর বাসিন্দা মারজিনা বলেন, “ঘর পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু সংস্কার না হওয়ায় থাকা সম্ভব নয়। চালের টিন নষ্ট, বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, কাপড়সহ সবকিছু ভিজে যায়। অধিকাংশ বাসিন্দা ছেলে-মেয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি। প্রশাসন যদি সংস্কার করে দিত, তাহলে কিছুটা স্বস্তি মিলত।
আবাসন-২-এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন জানান, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো মেরামতের জন্য কয়েকবার উপজেলা থেকে পরিদর্শন করা হলেও এখনো মেরামত হয়নি। জরাজীর্ণ ঘর মেরামতের বিষয়েও ইউএনওকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। “আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না,
তিনি বলেন,,,,উপকারভোগীদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি জলি জানান, আশ্রয়ণে প্রায় ৫০টি ঘর আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে এবং প্রায় ১১০টি ঘর ব্যবহারের অনুপযোগী। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় উপকারভোগীরা নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কর্মসংস্থান না থাকায় প্রায় ১০০টি পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এছাড়া নিরাপদ পানি, পানি নিষ্কাশন, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে ডাক্তার সংকট রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান হলে উপকারভোগীরা স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ঘরগুলোর সমস্যার বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কার করা হবে।