
আশীফ এন্তাজ রবিঃ যেকোনো দাবী আদায়ের জন্য ”আমরণ অনশন ” একটি অসাধারণ প্রক্রিয়া। এই অনশন ধর্মঘটের প্রবক্তা ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন করতেন।
ইংরেজরা যতই বদখত হোক না কেন, তাদের একজন রাণী ছিলো। বিলাতী রাণী। তাঁর রুচি অসম্ভব সুক্ষ্ম। কেউ ইচ্ছা করে না খেয়ে মরে যাচ্ছে, এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারতেন না। কাজেই কেউ অনশনে বসলে তিনি উতলা হয়ে যেতেন। বিলাতী ভব্যতা বলে কথা।
রাণীর এই দূর্বলতার কথা মহাত্মা গান্ধী জানতেন। কাজেই তিনি নানা কারণে অনশন করতেন। এবং হাতে নাতে তার ফলও পেতেন। তাঁর দাবী মেনে নেয়া হতো। পাটার সাথে যেমন পুতা লাগে, তেমনি অনশনের মতো আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন একজন উন্নত রুচির বিলাতী রাণী অথবা রাজা।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বিয়ে নিয়ে যে ভিসি চিন্তিত, তাকে অনশন দিয়ে ঘায়েল করা কঠিন। ম্যাচ বাক্সের খসখসে অংশে কেবল বারুদ ঘষলেই আগুন জলে। পানে বোটা ঘষলে আগুন জ্বলে না। কাজেই বেজায়গায় অনশন করলে, জয়ের চাইতে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আমাদের অভ্যাস হচ্ছে কপি পেস্ট করা। সেই ১৯৪৩ সালে অনশন করে কে কোন দাবী আদায় করেছিলো, এই ইতিহাস আমরা মাথার ভেতর ঢুকিয়ে কপি পেস্ট করে বসে আছি। প্রেক্ষাপট ভাবছি না। আমরা ভাবছি না, এটা বিলাতী শাসন না। আমরা কেবল দেয়াইশলাই বাক্সের খসখসে অংশটা দেখছি, ভাবছি পানের বোটা কিংবা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ঘষা মারলেই আগুন জ্বলে উঠবে।
আমরা ভাবছি না, সব রাণী বিলাতি না, সব রাজা বিলাতি না, সব যুবরাজ বিলাতি না। আমরা ইতিহাসের সাথে প্রেক্ষাপট গুলিয়ে ফেলছি। আপনি না খেয়ে ধুকে ধুকে মরবেন, এটা সবার জন্য বেদনার বিষয় নাও হতে পারে। বরং উল্টাও হতে পারে। কেউ কেউ এতে মজাও পেতে পারেন। ভাবুন, দরকার হলে একা একা গোপনে ভাবুন। ভাবা নিষিদ্ধ করার কোনো পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। অতএব ভাবুন।
আশীফ এন্তাজ রবি, লেখক ও সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট

দৈনিক চারঘাট ইউটিউব চ্যানেলে SUBSCRIBE করুন।