
রাজশাহীর বাঘায় পুরাতন এবং নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তার কাজ করছেন পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার। আর এই কাজের ছবি তুলাকে কেন্দ্র করে বাঘা প্রেসকাবের সদস্য ও রাজশাহী জেলা এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি আখতার রহমানকে অকথ্য ভাষায় গালা-গালি সহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আবারও আলোচনায় উঠে এসছেন আব্দুল কুদ্দুস সরকার। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার(২৬-০৫-২০২২)রাতে বাঘা থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এর আগে পৃথক অন্য একটি ঘটনায় তার নামে থানায় অপর একটি ডায়েরি করেন প্রেসকাবের আরেকজন সাংবাদিক ।
স্থানীয় লোকজন জানান, দলীয় প্রভাবে একের পর এক ঠিকাদারি কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্ণীতি করে চলেছেন বাঘা পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার। তার এ সকল কাজ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে গেলে তিনি গনমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠে গালা-গালি করে থাকেন। তার এ সকল কর্মকান্ডে বিব্রত খোদ উপজেলা আওয়ামীলীগ। এ নিয়ে আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে দু’জন সাংবাদিক পৃথক ঘটনায় থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরি (জি.ডি)করেছেন।
বাঘা প্রেস কাবের সদস্য ও রাজশাহী জেলা এশিয়ান টিভির সিনিয়র সাংবাদিক আখতার রহমান তাঁর দায়ের করা জিডিতে উল্লেখ করেন , গত ২৬ মে’ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার হরিনা এলাকায় একটি রাস্তার কাজে পুরাতন ও নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান এবং ঐ কাজের ছবি ধারণ করেন। পরক্ষনে এ খবর জানতে পেয়ে আব্দুল কুদ্দুস সরকার ঐ সাংবাদিককে মোবাইলে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ সহ তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন।

এর কিছুন পর আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিক আখতার রহমানকে উপজেলা চত্বরের সামনে পেয়ে অনেক মানুষের সামনে ফের গালা-গালি করেন এবং বলেন, আমি সরকারি কর্মকর্তাকে মেরেছি। এবার তোকে পেটাবো । যার ভিডিও চিত্র ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সর্বশেষ রাতে আক্তার রহমান নিরুপায় হয়ে প্রেসকাবের অন্যান্য সদস্যদের সাথে করে বাঘা থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জি.ডি) করেন।
এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করতে বারণ করায় বাঘা উপজেলা এলজিইডি অধিদপ্তরের এক উপ-সহকারি প্রকৌশলীকে অফিসে এসে মারপিট করেন আব্দুল কুদ্দুসের বড় ছেলে । এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন ঐ কর্মকর্তা। পরদিন উক্ত ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন দৈনিক ইত্তেফাক ও কালের কন্ঠের দুই সাংবাদিক। এ নিয়ে আব্দুল কুদ্দুস ঐ দুই সাংবাদিককে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। ফলে ২৪ জানুয়ারী আব্দুল কুদ্দুসের নামে অপর একটি জিডি করেন বাঘা প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক ও ইত্তেফাকের সাংবাদিক নুরুজ্জামান।
এ দিকে এই জি.ডি করার কারনে কোন প্রকার ইস্যু ছাড়াই নিজের অপকর্ম ঢাকতে ঐ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন সহ একটি মিছিল করেন আ’লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস সরকার ও তার লোকজন। এ ঘটনার একদিন পর স্থানীয় সাংবাদিকরা পাল্টা কর্মসূচী দেয়ার জন্য বর্ধিত সভা করলে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মন্টু ও আ’লীগ নেতা মাসুদ রানা তিলু সহ অন্যান্য নেত্রীবৃন্দ’রা বাঘা পৌর কার্যালয়ে আব্দুল কুদ্দুস সরকারকে ডেকে সাংবাদিকদের কাছে মাফ চাওয়ান এবং ঘটনাটি মিমাংসা করে দেন।
বাঘা পৌর সভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু-সহ দলীয় একাধিক নেতা-কর্মীরা জানান, আব্দুল কুদ্দুস সরকার আওয়ামীলীগ করায় ক্ষমতার দাপটে অস্থির করে তুলেছেন এলাকাবাসীকে। এক সময় তিনি হাটে-বাজারে দাড়ি ধরে চাল বিক্রী করলেও বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার আয়ের উৎস্য এবং সম্পদ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। তার নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিব্রত খোদ উপজেলা আওয়ামীলীগ।
এলাকাবাসীরা জানান, কুদ্দুসের নামে নারী ধর্ষণ অত:পর আলামত নষ্ট করার জন্য ডাক্তারকে ঘুষ দিতে গিয়ে র্যাবের হাতে আটক হওয়া-সহ বিবস্ত্র মামলা থেকে শুরু করে সাংবাদিক ও পুলিশকে হুমকি, উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় ককটেল ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং তার ছেলে কর্তৃক বাঘা পৌর সভার হিসাব রক এবং উপজেলা এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও একজন ব্যবসায়ীকে মারপিটের ঘটনা সকলের জানা।
লোকজনের অভিযোগ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ঠিকসই উন্নয়ন দেখতে চান, তখন আ’লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস সরকার একের-পর এক দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিম্ন মানের কাজ করে চলেছেন । কুদ্দুসের ভাষায় যেখানে মধু থাকে, সেখানে পিপড়া বসে। আমি যদি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাজ করি তাহলে সাংবাদিকরা বাধা সৃষ্টি করবে কেন ? নাম প্রকাশ না করার সর্তে বাঘা পৌর সভার এক কর্মকর্তা বলেন, আব্দুল কুদ্দুস সরকারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যতো উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার একটিও মানসম্মত নয়। তিনি কাজ গুলো তদন্ত করার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার ফৌজদার বলেন, হরিনা এলাকায় আব্দুল কুদ্দুস সরকার ক্রয় সূত্রে একটি রাস্তার কাজ করছেন। তিনি প্রথমে ভালো ইট ব্যবহার করলেও পরে পুরাতন এবং নিম্ন মানের ইট দিয়ে কাজ করায় তাকে ঐ কাজ করতে বারণ করা হয়েছে। অপর দিকে ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাঘা পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকারের নামে বিভিন্ন সময় থানায় একাধিক অভিযোগ হয়েছে সত্য। তবে সাংবাদিককে গাল-মন্দের বিষয়টি তিনি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ।

দৈনিক চারঘাট ইউটিউব চ্যানেলে SUBSCRIBE করুন।